শহুরে যান্ত্রিক জীবনে হাজারো কোলাহলের মাঝে নিত্য পিষ্ট হচ্ছি আমরা। কোথাও বসে আয়েশ করে সকাল কিংবা সন্ধ্যা রাতের খাবার গ্রহনের সাথে নিশ্চুপ নিরিবিলি প্রকৃতি দর্শনের উপায় টুকুও নেই। চারিদিকে কোলাহল, শোরগোল, হট্টগোল। এই যান্ত্রিক কোলাহলময় জীবন কে পাশ কাটিয়ে প্রিয়জন বা বন্ধুদের নিয়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যে একটি দিন অথবা একটি বেলা কাটিয়ে আসতে পারেন ঢাকা থেকে স্বল্প দূরত্বে অবস্থিত পানকৌড়ি ক্যাফে থেকে। কেরানীগঞ্জ উপজেলার কাজীরগাও গ্রামে সম্পূর্ণ বিলের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা গাছগাছালি ঘেরা রাস্তার পাশেই অবস্থিত পানকৌড়ি ক্যাফে।


ভ্রমণ-পিয়াসু খাদ্যরসিকদেরকে লোভনীয় স্বাদের জিবে জল-আনা খাবারের সাথে সাথে ভ্রমণের স্বাদ উপভোগের ব্যাবস্থা করার জন্যই এই ক্যফের গড়ে উঠা। ক্যাফের প্রধান বৈশিষ্ট্য প্রাকৃতিক পরিবেশে হারিয়ে যাওয়া।
ক্যাফের সম্পূর্ণ বসার ব্যাবস্থাটাই করা হয়েছে বাহিরে,যাতে প্রাকৃতিক পরিবেশে খাবার গ্রহণের সাথে সাথে প্রকৃতিকেও উপভোগ করা যায়। আউটডোরে বসার এই ব্যাবস্থাটাই মূলত পর্যটক ও খাদ্য রসিকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।


খাবার গ্রহণের সাথে সাথে উপভোগ করতে পারবেন বিলের স্বচ্ছ জলে মাঝির নৌকা নিয়ে যাওয়া অথবা পাখির কিচিরমিচির শব্দ। কোনো বন্ধুবৎসল পাখি হয়তো এসে গল্প জুড়ে দিতে পারে আপনার সাথেও। চারিদিকে যেদিকেই চোখ যাবে অবারিত সবুজের উপচে পরা ঢেউ আপনার মনকে সতেজ করতে বাধ্য।
দূরে চোখে পরবে দ্বীপের মতো কিছু বাড়ি,যার চারপাশে জলে থৈ থৈ নেই মাটির সাথে যোগাযোগ। একেকটা বাড়ি যেনো একেকটা দ্বীপ। এরকম বেশ কিছু বাড়ি আছে এই এলাকাতে। আরো দেখতে পাবেন জাল নিয়ে বিলের পানিতে মাছ ধরার দৃশ্য।


শুধু ক্যাফের সৌন্দর্যই নয় খাবারের স্বাদের বেলায় ও এদের মুন্সীয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। কয়েকমাসের মধ্যেই মন জয় করেছে খাদ্যরসিকদের। খাদ্য তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খাবার। হালের জনপ্রিয় পাস্তা-নুডলসের পাশাপাশি কেরানীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ক্ষুদের চালের খিচুড়ি সাথে ৮ রকমের ভর্তা ও ডিম ভাজি। আরো আছে চিকেন ফ্রাই, ফ্রাইড রাইস, বার্গার ও বিভিন্ন ফাস্টফুড আইটেম। খাবার শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় লাচ্ছি কিংবা কফিতে চুমুক দিতে দিতে উঠে যেতে পারেন দোতলায়, সুসজ্জিত প্রাকৃতিক হাওয়া খানায়। চারপাশ থেকে হু হু করে বইতে থাকা হাওয়ায় গা ভাসিয়ে দিয়ে চলতে থাকবে আড্ডা কিংবা পুরনো স্মৃতি রোমন্থন। দৃষ্টি যতোদূর যায় চোখে পড়বে টলটলে পানিতে আকাশের প্রতিচ্ছবি অথবা মাছরাঙা পাখির শিকার মুখে তুলে ডানা ঝাপ্টিয়ে উড়ে বেড়ানোর দৃশ্য।


চাইলে এই ক্যাফেতে রাতে দলবল নিয়ে ক্যাম্পিং করেও কাটাতে পারেন কোনো পূর্নিমার রাত। মধ্যরাতে ঝলসানো চাঁদের আলোয় স্নান করতে করতে গল্পে ফোরন কেটে পেরিয়ে যাবে রাত। তবে ক্যাম্পিংয়ের জন্য অবশ্যই আগে যোগাযোগ করে নিবেন। আলোচনা স্বাপেক্ষে তৈরি করে নিতে পারেন টার্কি খিচুড়ি কিংবা হাঁসের ভূনা অথবা বিলের স্বচ্ছ জল থেকে ধরে আনা তরতাজা কোনো মাছের কোনো আইটেম।


যাতায়াত: ঢাকা থেকে বেশ কয়েকটি উপায়ে পোছে যেতে পারেন পানকৌড়ি ক্যাফেতে। গুলিস্তান থেকে দিশারি কিংবা ৩ নাম্বার বাসে কেরানীগঞ্জ কদমতলী বাসস্ট্যান্ড নেমে রিকশায় কাজীরগাও কফি হাউজ বললেই নিয়ে যাবে ভারা নিবে ৪০-৬০ টাকা। কদমতলী থেকে দূরত্ব ৪ কিলোমিটার।
এছাড়া মিটফোর্ড হাসপাতালের পাশে ফেরিঘাট থেকে ট্রলারে নদী পার হয়ে জিঞ্জিরা ঘাটে নেমে রিকশায় আসতে পারেন।
মোহাম্মদপুর বসিলা ব্রিজ পাড় হয়েও আসতে পারেন খুব অল্প সময়ে। এক্ষেত্রে আপনাকে বসিলা থেকে আটিবাজার তারপর কোনাখোলা হয়ে কাজিরগাও আসতে হবে লোকাল সিএনজিতে আসতে চাইলে অথবা কোনাখোলা থেকে রিজার্ভ নিয়েও সরাসরি আসতে পারবেন।
যোগাযোগ: ০১৮৫৫-৮৮৭৫৫৬
পানকৌড়ি ক্যাফের ফেসবুক পেজ: পানকৌড়ি ক্যাফে
গুগল ম্যাপের লোকেশন: পানকৌড়ি ক্যাফে
ফিচার ছবি: ইসমাইল হোসেন
অসাধারণ লিখনী
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের সাথেই থাকুন।